বৃত্তের কয়টি অংশ ও কি কি
আজকের আর্টিকেলের মুল বিষয় হলো বৃত্তের কয়টি অংশ ও কি কি সম্পর্কে। এছাড়াও আজকের আর্টিকেলে আমরা বৃত্ত কাকে বলে, বৃত্তের ব্যাস এবং ব্যাসার্ধ কাকে বলে, একটি বৃত্তে কয়টি ব্যাস, জ্যা এবং কেন্দ্র থাকে তা সম্পর্কে আলোচনা করবো।
তাহলে দেরি না করে চলুন জেনে নেই বৃত্তের কয়টি অংশ ও কি কি সম্পর্কে।
বৃত্তের কয়টি অংশ ও কি কি
বৃত্তের বিভিন্ন অংশ রয়েছে। যা হলো ব্যাসার্ধ, ব্যাস, জ্যামিতিক কেন্দ্র, পরিধি, জ্যা, খন্ড, কোনীয় খন্ড, চাপ ইত্যাদি। এই অংশগুলোকে বৃত্তের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ধরা হয়। নিম্নে বৃত্তের এই অংশগুলোর বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।- ব্যাসার্ধঃ একটি বৃত্তের কেন্দ্র থেকে বৃত্তের যেকোনো বিন্দুর মধ্যে দুরত্বকে ব্যাসার্ধ বলা হয়। ব্যাসের অর্ধেককেও ব্যাসার্ধ বলা হয়ে থাকে।
- ব্যাসঃ বৃত্তের মধ্যে যেকোনো দুই প্রান্তের দুরত্বকে ব্যাস বলা হয়। ব্যাসের ক্ষেত্রে বৃত্তের প্রান্ত বিন্দুগুলো কেন্দ্র দিয়ে যায়। ব্যাস হলো দুইটি ব্যাসার্ধের সমান।
- জ্যামিতিক কেন্দ্রঃ বৃত্তের কেন্দ্রবিন্দুকেই জ্যামিতিক কেন্দ্র বলা হয়।
- পরিধিঃ একটি বৃত্তের চারপাশের যে মোট দৈর্ঘ্য তাকে বৃত্তের পরিধি বলে। অর্থাৎ একটি বৃত্তের সীমানা যতদুর পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে, তাকে পরিধি বলা হয়।
- জ্যাঃ একটি বৃত্তের মধ্যে দিয়ে যাওয়া যেকোনো সরলরেখা যা কেন্দ্র স্পর্শ করে না, তাকে জ্যা বলা হয়।
- খন্ডঃ বৃত্তের মধ্যে জ্যা দ্বারা যে বিভক্ত অংশ তৈরি হয়, তাকে খন্ড বলা হয়।
- কোনীয় খন্ডঃ একটি বৃত্তের কেন্দ্র থেকে দুটি ব্যাসার্ধ এবং তাদের মধ্যে বৃত্তের অংশ দিয়ে তৈরি এলাকাকে কোনীয় খন্ড বলা হয়।
- চাপঃ বৃত্তের মধ্যে যেকোনো দুটি বিন্দুর মধ্যে যে জায়গা বা অংশ থাকে, তাকে চাপ বলে।
একটি বৃত্তের একটি মাত্র কেন্দ্র থাকে। বৃত্তের কেন্দ্র থেকে যেকোনো দুরত্বে এর মান সমান। একটি বৃত্ত গঠিত হয় একটি মাত্র কেন্দ্রের ওপর নির্ভর করে।
বৃত্তের সংজ্ঞা থেকে আমরা জানতে পারি, একটি নির্দিষ্ট কেন্দ্রকে বিবেচনা করে এবং চারিদিকে সমান দুরত্বে এবং একই সমতলে একবার ঘুরে আসলে যে গঠন তৈরি হয়, তাকে বৃত্ত বলে।
ধরি, একটি বৃত্তের কেন্দ্র O এবং পরিধির ওপর দুইটি বিন্দু রয়েছে। যার মধ্যে একটি হলো A এবং অপরটি হলো B. এখন এই বিন্দু দুইটি যদি একে অপরের সাথে মিলিত হয় এবং কেন্দ্র O কে স্পর্শ করে তাহলে একটি ব্যাস তৈরি হবে।
বৃত্ত কাকে বলে চিত্র সহ
পূর্বে আমরা বৃত্তের কয়টি অংশ ও কি কি সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা জানবো বৃত্ত কাকে বলে এবং চিত্রসহ উদাহরন দিয়ে এর বর্ণনা করবো। তাহলে চলুন জেনে নেই বৃত্ত কাকে বলে তা সম্পর্কে।একটি নির্দিষ্ট বিন্দুকে কেন্দ্র করে এর চারিপাশে সমান দুরত্বে এবং একই সমতলে ঘুরে আসলে যে গঠন তৈরি হয়, তাকে বৃত্ত বলা হয়। একটি বৃত্তের মধ্যে বিভিন্ন অংশ থাকে। যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো হলো কেন্দ্র, ব্যাসার্ধ এবং পরিধি। নিম্নে একটি সম্পূর্ণ বৃত্তের তথ্যসহ চিত্র দেওয়া হলো।
বৃত্তের ব্যাস ও ব্যাসার্ধ কাকে বলে
পূর্বে আমরা বৃত্তের কয়টি অংশ ও কি কি এবং বৃত্ত কাকে বলে তা চিত্রসহ দেখেছি। সেখানে ব্যাস এবং ব্যাসার্ধ সম্পর্কেও কিছু তথ্য দেওয়া ছিল। এখন চলুন জেনে নেই বৃত্তের ব্যাস এবং ব্যাসার্ধ কাকে বলে তার বিস্তারিত সম্পর্কে।
বৃত্তের ব্যাস (Diameter) এবং ব্যাসার্ধ (Radius) হলো বৃত্তের দুটি গুরুত্বপূর্ণ পরিমাণ।
১. ব্যাসার্ধ (Radius):
- ব্যাসার্ধ হলো বৃত্তের কেন্দ্র থেকে বৃত্তের যে কোন পয়েন্ট পর্যন্ত দূরত্ব।
- এটি বৃত্তের আকারের মৌলিক একক, যেহেতু এটি বৃত্তের কেন্দ্র থেকে যে কোনও পয়েন্ট পর্যন্ত সমান দূরত্বে থাকে।
- সাধারণত ব্যাসার্ধের প্রতীক হলো r।
উদাহরণ:
যদি বৃত্তের কেন্দ্র O এবং বৃত্তের একটি পয়েন্ট P হয়, তাহলে হলো ব্যাসার্ধ এবং এটি -এর সমান।
২. ব্যাস (Diameter):
- ব্যাস হলো বৃত্তের যে কোন দুই পয়েন্টের মধ্যে সরাসরি সম্পর্কিত রেখা, যা বৃত্তের কেন্দ্রের মধ্য দিয়ে চলে।
- ব্যাস হলো বৃত্তের সবচেয়ে দীর্ঘরেখা, এবং এটি ব্যাসার্ধের দ্বিগুণ হয়।
- সাধারণত ব্যাসের প্রতীক হলো d।
- ব্যাস = ২ × ব্যাসার্ধ ()
উদাহরণ:
ধরা যাক, বৃত্তের ব্যাসার্ধ ইউনিট হলে, ব্যাস হবে:
- বৃত্তের ব্যাসার্ধঃ একটি বৃত্তের কেন্দ্র থেকে যেকোনো দুরত্বে বা যেকোনো জায়গার বিন্দু পর্যন্ত একটি সরলরেখার দুরত্বকে ব্যাসার্ধ বলা হয়। ব্যাসার্ধ একটি বৃত্তের অর্ধেক ব্যাসের সমান।
- ব্যাসঃ একটি বৃত্তের মধ্যে দুটি বিন্দু পরস্পর কেন্দ্র দিয়ে গমন করে এবং দুই প্রান্তকে যুক্ত করে তাকে ব্যাস বলা হয়। একটি ব্যাস দুটি ব্যাসার্ধের সমান। অর্থাৎ ব্যাস= ২ * ব্যাসার্ধ।
বৃত্তের ব্যাস ও ব্যাসার্ধের মধ্যে পার্থক্য কি
পূর্বে আমরা বৃত্তের কয়টি অংশ ও কি কি, বৃত্ত কাকে বলে, ব্যাসার্ধ এবং ব্যাস কাকে বলে তা সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা জানবো একটি বৃত্তের ব্যাস এবং ব্যাসার্ধের মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে।- ব্যাসার্ধ হলো একটি বৃত্তের কেন্দ্র থেকে বৃত্তের যেকোনো দুরত্ব পর্যন্ত তৈরি সরলরেখা।
- ব্যাস হলো একটি বৃত্তের এক বিন্দু থেকে অপর বিন্দুর দুরত্ব এবং দুটি বিন্দু অবশ্যই কেন্দ্র স্পর্শ করবে।
- ব্যাসার্ধ হলো একটি বৃত্তের অর্ধেক ব্যাসের সমান।
- ব্যাস হলো একটি বৃত্তের মধ্যে থাকা দুটি ব্যাসার্ধের যোগফল। অর্থাৎ, ব্যাস= ২* ব্যাসার্ধ।
- ব্যাসার্ধকে r দিয়ে প্রকাশ করা হয়।
- ব্যাসকে d দিয়ে প্রকাশ করা হয়।
- ব্যাসার্ধ এবং ব্যাসের সম্পর্ক হলো d=2r.
একটি বৃত্তের কয়টি কেন্দ্র থাকে
পূর্বে আমরা বৃত্তের কয়টি অংশ ও কি কি, বৃত্ত কাকে বলে, বৃত্তের ব্যাস এবং ব্যাসার্ধ কাকে বলে এবং এদের মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা জানব একটি বৃত্তের কয়টি কেন্দ্র থাকে তা সম্পর্কে।একটি বৃত্তের একটি মাত্র কেন্দ্র থাকে। বৃত্তের কেন্দ্র থেকে যেকোনো দুরত্বে এর মান সমান। একটি বৃত্ত গঠিত হয় একটি মাত্র কেন্দ্রের ওপর নির্ভর করে।
বৃত্তের সংজ্ঞা থেকে আমরা জানতে পারি, একটি নির্দিষ্ট কেন্দ্রকে বিবেচনা করে এবং চারিদিকে সমান দুরত্বে এবং একই সমতলে একবার ঘুরে আসলে যে গঠন তৈরি হয়, তাকে বৃত্ত বলে।
অর্থাৎ আমরা সংজ্ঞা থেকেও বুঝতে পারি একটি বৃত্তের মাত্র একটি কেন্দ্র থাকে। নিম্নে গানিতিক উদাহরনের মাধ্যমে বৃত্তের কেন্দ্র সম্পর্কে ধারনা দেওয়া হলো।
আমি যদি একটি বৃত্তকে কার্তেসীয় সমতলে (x,y) সমন্বয় ব্যবহার করে প্রকাশ করি, তাহলে বৃত্তের সাধারন সমীকরন হবে নিম্নরুপ,
(x-h)^2 + (y-k)^2 = r^2
সমীকরনে (h,k) হলো বৃত্তের কেন্দ্র এবং r হলো বৃত্তের ব্যাসার্ধ। সুতরাং সমীকরন থেকেও বোঝা যায় যে, একটি বৃত্তে শুধুমাত্র একটিই কেন্দ্র থাকে।
একটি বৃত্তের কয়টি জ্যা থাকে
একটি বৃত্তের মধ্যে অসংখ্য জ্যা থাকতে পারে। জ্যা হলো একটি বৃত্তের মধ্যে যেকোনো দুইটি বিন্দুর মধ্যে দুরত্ব। এই ক্ষেত্রে বিন্দুগুলো কেন্দ্র স্পর্শ করে না। যার ফলে একটি বৃত্তের মধ্যে অসংখ্য জ্যা উৎপন্ন হয়।একটি বৃত্তের অনন্ত (অসংখ্য) জ্যা (Chord) থাকে।
জ্যা (Chord) কাকে বলে?
- জ্যা হলো বৃত্তের দুটি পয়েন্টের মধ্যে সরাসরি রেখা, যা বৃত্তের মধ্যে অবস্থিত এবং এই রেখা বৃত্তের কেন্দ্রের মাধ্যমে না যায়।
- যদি জ্যা বৃত্তের কেন্দ্রের মধ্য দিয়ে চলে, তাহলে এটি ব্যাস (Diameter) হবে।
কেন বৃত্তের অনন্ত জ্যা থাকে?
- একটি বৃত্তে যে কোনো দুটি পয়েন্টের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের জ্যা তৈরি করা যেতে পারে।
- আপনি বৃত্তের যেকোনো দুটি পয়েন্ট নির্বাচন করে তাদের মধ্যে একটি জ্যা আঁকতে পারেন এবং এই প্রক্রিয়াটি অনন্তবার করা সম্ভব।
বৃত্তের জ্যা কে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়। নিম্নে ভাগসমুহ উল্লেখ করা হলো।
- ছোট জ্যাঃ বৃত্তের কেন্দ্রর কাছাকাছি যে জ্যা তৈরি হয়, তাকে ছোট জ্যা বলা হয়।
- বড় জ্যাঃ বৃত্তের কেন্দ্র থেকে দূরে যে জ্যা তৈরি করা হয়, তাকে বড় জ্যা বলা হয়।
- সবচেয়ে বড় জ্যাঃ যেই জ্যা বৃত্তের কেন্দ্রের একদম কাছাকাছি দিয়ে যায়, তাকে সবচেয়ে বড় জ্যা বলা হয়।
একটি বৃত্তের কয়টি ব্যাস থাকে
পূর্বে আমরা বৃত্তের কয়টি অংশ ও কি কি, বৃত্ত কাকে বলে, বৃত্তের ব্যাস এবং ব্যাসার্ধ কাকে বলে ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা জানবো একটি বৃত্তে কয়টি ব্যাস থাকে তা সম্পর্কে।একটি বৃত্তে অসংখ্য ব্যাস থাকতে পারে।
ব্যাস হলো বৃত্তের দুই বিন্দুর মধ্যে যোগফল এবং এই বিন্দু দুইটি অবশ্যই কেন্দ্র স্পর্শ করবে। আমরা জানি, একটি বৃত্তে অসংখ্য বিন্দু থাকে। সুতরাং একটি বৃত্তে অসংখ্য ব্যাস থাকবে। যদি আমরা একটি উদাহরন এর মাধ্যমে ব্যাখ্যা দেই তাহলে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে।
ধরি, একটি বৃত্তের কেন্দ্র O এবং পরিধির ওপর দুইটি বিন্দু রয়েছে। যার মধ্যে একটি হলো A এবং অপরটি হলো B. এখন এই বিন্দু দুইটি যদি একে অপরের সাথে মিলিত হয় এবং কেন্দ্র O কে স্পর্শ করে তাহলে একটি ব্যাস তৈরি হবে।
এইভাবে আমরা একটি বৃত্তের মধ্যে অসংখ্য বিন্দু কল্পনা করতে পারি এবং অসংখ্য ব্যাস তৈরি করতে পারি।
লেখকের মন্তব্য - বৃত্তের কয়টি অংশ ও কি কি
আজকের আর্টিকেলে আমরা বৃত্তের কয়টি অংশ ও কি কিবৃত্তের কয়টি অংশ ও কি কি, বৃত্ত কাকে বলে, বৃত্তের ব্যাস এবং ব্যাসার্ধ কাকে বলে এবং এদের মধ্যে পার্থক্য, একটি বৃত্তে কয়টি জ্যা, ব্যাস এবং ব্যাসার্ধ থাকে তা সম্পর্কে জেনেছি।আশা করি আজকের আর্টিকেল থেকে আপনি আপনার মূল্যবান তথ্য পেয়েছেন। প্রতিনিয়ত এই ধরনের আর্টিকেল পড়তে ওয়েবসাইট ফলোও করুন। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url