ত্রিভুজের ভূমি নির্ণয়ের সূত্র কি

আজকের আর্টিকেলের মুল বিষয় হলো ত্রিভুজের ভূমি নির্ণয়ের সূত্র কি সম্পর্কে। এছাড়াও আজকের আর্টিকেলে আমরা চতুর্ভুজের পরিসীমা নির্ণয়ের সূত্র, চতুর্ভুজের ক্ষেত্রফলের সূত্র কি, সমকোণী ত্রিভুজের ক্ষেত্রফলের সূত্র কি এবং রম্বসের ক্ষেত্রফল ও পরিসীমা নির্ণয়ের সূত্র সম্পর্কেও আলোচনা করা হবে। আশা করি শেষ পর্যন্ত সাথে থাকবেন।

ত্রিভুজের ভূমি নির্ণয়ের সূত্র কি

তাহলে দেরি না করে চলুন জেনে নেই ত্রিভুজের ভূমি নির্ণয়ের সূত্র কি তা সম্পর্কে।

ত্রিভুজের ভূমি নির্ণয়ের সূত্র কি

তিনটি বাহু দ্বারা আবদ্ধ ক্ষেত্রে ত্রিভুজ বলা হয়। একটি ত্রিভুজে তিনটি অংশ থাকে। যা হলো লম্ব, ভুমি এবং উচ্চতা। আমরা একটি ত্রিভুজের এই তিনটি অংশের মান বের করতে পারি সুত্রের সাহায্যে। এখন আমরা একটি ত্রিভুজের ভুমি কিভাবে বা কোন সুত্র দিয়ে নির্ণয় করতে হয় তা সম্পর্কে জানবো।
 
ত্রিভুজের ভুমি আমরা দুইটি পদ্ধতিতে নির্ণয় করতে পারি। যথাঃ
 
  • যদি ত্রিভুজের ভুমি এবং উচ্চতা দেওয়া থাকে, তাহলে ত্রিভুজের ভুমি নির্ণয় করতে পারি।
  • হেরনের সুত্রের সাহায্যে আমরা ত্রিভুজের ভুমি নির্ণয় করতে পারি।

আমরা উপরোক্ত এই দুই পদ্ধতির মাধ্যমেই এখন ত্রিভুজের ভুমি নির্ণয় করবো। নিম্নে প্রথম পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
 
পদ্ধতি-১ঃ ভুমি এবং উচ্চতার সুত্র

একটি ত্রিভুজের ভুমি এবং উচ্চতার সাধারন এবং সহজ সুত্রটি হলোঃ
 
ত্রিভুজের ভুমি= ১/২ * ভুমি * উচ্চতা
 
ধরি, একটি ত্রিভুজের ভুমি ৮ মিটার এবং উচ্চতা ৫ মিটার। তাহলে ত্রিভুজের ভুমি হবে,
 
ভুমি = ১/২ * ভুমি * উচ্চতা
বা, ভুমি = ১/২ * ৮ * ৫
বা, ভুমি = ২০ বর্গমিটার।
 
পদ্ধতি-২ঃ হেরনের সুত্রের সাহায্যে

যদি আমাদের একটি ত্রিভুজের তিনটি বাহুর দৈর্ঘ্য জানা থাকে, তাহলে সেক্ষেত্রে আমরা হেরনের সুত্র ব্যবহার করে ত্রিভুজের ভুমি নির্ণয় করতে পারি। সুত্রটি হলোঃ
 
A = √s (s-a) (s-b) (s-c)
 
এখানে, A হলো ত্রিভুজের ভুমি
a,b,c হলো ত্রিভুজের তিনটি বাহুর দৈর্ঘ্য এবং
s= ত্রিভুজের পরিসীমা।
 
একটি উদাহরনের সাহায্যে দেখা যাক। ধরি, একটি ত্রিভুজের তিনটি বাহু a, b ও c এবং এই তিনটি বাহুর দৈর্ঘ্য যথাক্রমে 7, 8 এবং 9 মিটার। ত্রিভুজের ভুমির মান কত?
 
এক্ষেত্রে প্রথমে আমাদের ত্রিভুজের আধার পরিসীমা নির্ণয় করতে হবে।
 
আধার পরিসীমা, s=7+8+9/2
বা, s= 12 মিটার।
 
এবার আমরা ত্রিভুজের ভুমি নির্ণয় করতে পারবো।
 
ত্রিভুজের ভুমি, A=√12 (12-7) (12-8) (12-9)
বা, ত্রিভুজের ভুমি, A= √12 * √5 * √4 * √3
বা ত্রিভুজের ভুমি, A= √720
বা, ত্রিভুজের ভুমি, A= 26.83 বর্গমিটার। 

আশা করি উপরোক্ত তথ্য থেকে আপনি ত্রিভুজের ভূমি নির্ণয়ের সূত্র কি সম্পর্কে সঠিক তথ্য পেয়েছেন।

চতুর্ভুজের পরিসীমা নির্ণয়ের সূত্র

পূর্বে আমরা ত্রিভুজের ভূমি নির্ণয়ের সূত্র কি তা সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা জানবো চতুর্ভুজের পরিসীমা নির্ণয় করার সুত্র সম্পর্কে।
 
যদি একটি চতুর্ভুজের চারটি বাহু দৈর্ঘ্য যথাক্রমে a, b, c এবং d হয়, তাহলে চতুর্ভুজের পরিসীমা হবে,

পরিসীমা, P= a + b + c + d
 
ধরি, একটি চতুর্ভুজের চারটি বাহু a, b, c এবং d এর দৈর্ঘ্য যথাক্রমে 5, 7, 6 এবং 8 দেওয়া আছে। এক্ষেত্রে চতুর্ভুজের পরিসীমা হবে,
 
P= a + b + c + d
বা, P= 5 + 7 + 6 + 8
বা, P= 26 মিটার
 
সাধারন চতুর্ভুজের ক্ষেত্রে উপরোক্ত সুত্রের মাধ্যমে পরিসীমা নির্ণয় করা সম্ভব। তবে চতুর্ভুজ বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে আবার আলাদা আলাদা সুত্র ব্যবহার করা হয়ে থাকে। নিম্নে বিভিন্ন ধরনের চতুর্ভুজের ক্ষেত্রে পরিসীমা নির্ণয়ের সুত্রগুলো উল্লেখ করা হলো। 

বর্গক্ষেত্রের পরিসীমা নির্ণয়ের সুত্র
 
যদি বর্গক্ষেত্রের সব বাহু সমান হয় এবং একটি বাহুর দৈর্ঘ্য a হয়। তাহলে পরিসীমা হবে,
 
P= 4a
 
এখানে a= বর্গক্ষেত্রের চারটি বাহুর মান।
 
ধরি, একটি বর্গক্ষেত্রের একটি বাহুর দৈর্ঘ্য ৬ মিটার। তাহলে বর্গক্ষেত্রের পরিসীমা হবে,
 
P= 4a
বা, P= 4 * 6
বা, P= 24 মিটার।
 
আয়তক্ষেত্রের পরিসীমা নির্ণয়ের সুত্র

যদি আয়তক্ষেত্রের বিপরীত বাহুগুলো পরস্পর সমান হয় এবং দৈর্ঘ্য l ও প্রস্থ w হয়, তাহলে আয়তক্ষেত্রের পরিসীমা হবে,
 
P= 2 (l+w)
 
ধরি, একটি আয়তক্ষেত্রের দৈর্ঘ্য ৮ মিটার এবং প্রস্থ ৫ মিটার। তাহলে আয়তক্ষেত্রের পরিসীমা হবে,
 
P= 2 (l+w)
বা, P= 2 (8+5)
বা, P= 26 মিটার
 
সমান্তর চতুর্ভুজের পরিসীমা নির্ণয়ের সুত্র

যদি সমান্তর চতুর্ভুজের বিপরীত বাহু সমান হয় এবং বাহুর দৈর্ঘ্য যথাক্রমে a এবং b হয়, তাহলে সমান্তর চতুর্ভুজের পরিসীমা হবে,
 
P= 2 (a+b)
 
ধরি, একটি সমান্তর চতুর্ভুজের দুটি ভিন্ন বাহুর দৈর্ঘ্য যথাক্রমে ৭ মিটার এবং ৯ মিটার। তাহলে সমান্তর চতুর্ভুজের পরিসীমা হবে,
 
P= 2 (a+b)
বা, P= 2 (7+9)
বা, P= 32 মিটার।

চতুর্ভুজের ক্ষেত্রফলের সূত্র কি

পূর্বে আমরা ত্রিভুজের ভূমি নির্ণয়ের সূত্র কি এবং চতুর্ভুজের পরিসীমা নির্ণয় করার সুত্র সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা জানবো চতুর্ভুজের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করার সুত্র সম্পর্কে।
 
যদি একটি চতুর্ভুজের সব বাহুর দৈর্ঘ্য এবং কোনের মান জানা থাকে, তবে সেক্ষেত্রে ব্রেট স্নাইডারের সূত্র ব্যবহার করে চতুর্ভুজের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে ক্ষেত্রফল হবে,
 
A= √(s-a)(s-b)(s-c)(s-d)-abcd*cos^2(θ/2)
 
এখানে, A= চতুর্ভুজের ক্ষেত্রফল
a, b, c, d = চতুর্ভুজের চার বাহুর দৈর্ঘ্য
s= চতুর্ভুজের আধার পরিসীমা
θ= চতুর্ভুজের মধ্যবর্তী কোন।

সমকোণী ত্রিভুজের ক্ষেত্রফলের সূত্র কি

পূর্বে আমরা ত্রিভুজের ভূমি নির্ণয়ের সূত্র কি, চতুর্ভুজের পরিসীমা এবং ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের সুত্র সম্পর্কে জেনেছি। এখন চলুন জেনে নেই সমকোনী ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের সুত্র সম্পর্কে।
 
যদি সমকোনী ত্রিভুজের ভুমি এবং উচ্চতা জানা থাকে, তবে সেক্ষেত্রে সমকোনী ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল হবে
 
A= 1/2 * ভুমি * উচ্চতা
 
ধরি, একটি সমকোনী ত্রিভুজের ভুমি ৬ মিটার এবং উচ্চতা ৪ মিটার। তাহলে সমকোনী ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল হবে,
 
A= 1/2 * 6 * 4
বা, A= 12 বর্গমিটার।

রম্বসের ক্ষেত্রফল ও পরিসীমা নির্ণয়ের সূত্র

পূর্বে আমরা ত্রিভুজের ভূমি নির্ণয়ের সূত্র কি, চতুর্ভুজের পরিসীমা, ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের সুত্র এবং সমকোনী ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের সুত্র সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা জানবো রম্বসের ক্ষেত্রফল এবং পরিসীমা নির্ণয়ের সুত্র সম্পর্কে।
 
রম্বসের ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের সুত্র
 
রম্বসের ক্ষেত্রফল দুইভাবে নির্ণয় করা যায়। যথাঃ
 
পদ্ধতি-১ঃ কর্ণ ব্যবহার করে ক্ষেত্রফল নির্ণয়

রম্বসের কর্ণগুলো যদি একে অপরের সাথে সমকোনে ছেদ করে, তবে সেক্ষেত্রে রম্বসের ক্ষেত্রফল হবে,
 
A= 1/2 * d1 * d2
 
এখানে, A হলো রম্বসের ক্ষেত্রফল
d1 হলো প্রথম কর্ণের দৈর্ঘ্য
d2 হলো দ্বিতীয় কর্ণের দৈর্ঘ্য।
 
পদ্ধতি-২ঃ ভুমি এবং উচ্চতা ব্যবহার করে ক্ষেত্রফল নির্ণয়

যদি একটি রম্বসের এক বাহুকে ভুমি এবং ভুমির ওপর অঙ্কিত লম্বকে উচ্চতা হিসেবে ধরা হয়, তবে সেক্ষেত্রে রম্বসের ক্ষেত্রফল হবে,
 
A= b * h
 
এখানে, A হলো রম্বসের ক্ষেত্রফল
b হলো রম্বসের ভুমির দৈর্ঘ্য
h হলো উচ্চতার দৈর্ঘ্য।
 
রম্বসের পরিসীমা নির্ণয়ের সুত্র

একটি রম্বসের চারটি বাহুর মান সাধারনত সমান হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে রম্বসের পরিসীমা হবে,
 
P= 4 * a
 
এখানে, P হলো রম্বসের পরিসীমা
a হলো রম্বসের এক বাহুর দৈর্ঘ্য।

লেখকের মন্তব্য - ত্রিভুজের ভূমি নির্ণয়ের সূত্র কি

আজকের আর্টিকেল থেকে আমরা ত্রিভুজের ভূমি নির্ণয়ের সূত্র কি, চতুর্ভুজের পরিসীমা, ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের সুত্র এবং সমকোনী ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের সুত্র ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে জেনেছি। 

আশা করি আজকের আর্টিকেল থেকে আপনি আপনার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন। প্রতিনিয়ত এই ধরনের আর্টিকেল পড়তে ওয়েবসাইট ফলোও করুন। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url