সামাজিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধের তালিকা

আজকের আর্টিকেলের মুল বিষয় হলো সামাজিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধের তালিকা সম্পর্কে। এছাড়াও আজকের আর্টিকেলে আমরা দায়িত্বশীলতা বলতে কি বুঝায়, দায়িত্বশীলতা বলতে কি বুঝায় পৌরনীতি, নিজের আত্মপরিচয়ের প্রতি করণীয় আচরণ, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বলতে কি বুঝায় এবং ১০ টি সামাজিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধ সম্পর্কেও আলোচনা করবো।

সামাজিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধের তালিকা

তাহলে দেরি না করে চলুন জেনে নেই সামাজিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধের তালিকা সম্পর্কে।

সামাজিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধের তালিকা

সমাজে বাস করা মানুষদের আচরন এবং সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে সামাজিক রীতিনীতি এবং মুল্যবোধ গড়ে ওঠে। এই নিয়মনীতি সমাজে বাস করা একজন ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের মধ্যে যোগাযোগ ও সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করে। নিম্নে বিভিন্ন ধরনের মুল্যবোধ সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরা হলো।
 
পারিবারিক মুল্যবোধ

  • একটি পরিবার হলো সমাজের মুল কেন্দ্র। তাই এখান থেকেই আমাদের মুল্যবোধের চর্চা করা উচিত। বাবা-মা, ভাই-বোনসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা ও স্নেহ করার মাধ্যমে আমাদের মুল্যবোধের চর্চা করা উচিত।
  • পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করা এবং একসাথে কাজ করা পারিবারিক মুল্যবোধের অন্তর্ভুক্ত।
  • বিবাহ করা এবং পারিবারিক জীবনের প্রতি সম্মান এবং এই বন্ধন ঠিক রাখার যে দায়িত্ব তা সামাজিক মুল্যবোধের অংশ হিসেবে কাজ করে।
 
নৈতিক মুল্যবোধ
 
  • সত্যবাদিতা নৈতিক মুল্যবোধের প্রথম ও প্রধান অংশ।
  • আমাদের সমাজে প্রতিটি ক্ষেত্রে সঠিক বিচার বা ন্যায়বিচার হলো নৈতিক মুল্যবোধের আরেকটি উদাহরন।
  • পরোপকারিতা নৈতিক মুল্যবোধের আরেকটি অংশ।
 
ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মুল্যবোধ
 
  • ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা এবং তা সুন্দরভাবে পালন করা ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মুল্যবোধের অংশ।
  • ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে নিজ ধর্ম এবং সংস্কৃতিকে বাচিয়ে রাখাও মুল্যবোধের মধ্যে পড়ে। 

আচার-অনুষ্ঠান ও সামাজিক রীতিনীতি
 
  • আমাদের আচরনের মধ্যে শিষ্টাচার বজায় রাখা সামাজিক নীতির অন্তর্ভুক্ত।
  • বড়দের সম্মান করা এবং ছোটদের স্নেহ করাও সামাজিক নীতির অংশ।
  • সামাজিক নীতির সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো অতিথিপরায়নতা।
 
সামাজিক সম্পর্কের মুল্যবোধ
 
  • সমাজের সকল শ্রেনীর মানুষের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা।
  • একে অপরের প্রতি সহানুভুতি এবং সহমর্মিতা প্রকাশ করা সামাজিক মুল্যবোধের অংশ।
  • সমাজের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখাও সামাজিক মুল্যবোধের অংশ হিসেবে কাজ করে।
 
ব্যাক্তিগত মুল্যবোধ
 
  • প্রতিটি মানুষের নিজ নিজ স্বাধীনতা ব্যাক্তিগত মুল্যবোধের মধ্যে পড়ে।
  • আমাদের আচরনের মধ্যে নম্রতা এবং ভদ্রতাও ব্যাক্তিগত মুল্যবোধের অন্তর্ভুক্ত।
  • নিজের আবেগ এবং কাজের ওপর নিয়ন্ত্রন রাখাও এক ধরনের ব্যাক্তিগত মুল্যবোধ।
 
আশা করি উপরোক্ত তথ্য থেকে সামাজিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধের তালিকা সম্পর্কে সঠিক ধারনা পেয়েছেন।

দায়িত্বশীলতা বলতে কি বুঝায়

পূর্বে আমরা সামাজিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধের তালিকা সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা জানবো দায়িত্বশীলতা বলতে কি বুঝায় তা সম্পর্কে। 

একজন ব্যাক্তি যখন তার দায়িত্ব এবং কর্তব্য সম্পূর্ণভাবে পালন করে এবং তার কাজের ফলাফলের প্রতি সচেতন থাকে, তখন তাকে দায়িত্বশীলতা বলে। একজন দায়িত্ববান ব্যাক্তি যে শুধুমাত্র তার কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে তা নয়। 

দেশের এবং সমাজের মানুষের ক্ষেত্রেও একজন ব্যক্তির সমান দায়িত্ব থাকে। একে অপরকে সাহায্য করাও এই দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
 
নিম্নে দায়িত্বশীলতার কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে আলোচনা করা হলো।
 
  • একজন দায়িত্ববান ব্যাক্তি তার এবং অন্যের কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করে থাকে।
  • কাজে শুরুতে একজন দায়িত্ববান ব্যক্তি সুন্দর পরিকল্পনা এবং ব্যবস্থাপনা গ্রহন করে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করে।
  • যদি কখনো কোনো কাজ করতে গিয়ে ভুল হয়ে যায়, তাহলে একজন দায়িত্ববান ব্যক্তি তার ভুল স্বীকার করে।
  • সবসময় উন্নতি সাধন করার প্রচেষ্টায় থাকে।
  • একে অপরের কাজে সবসময় সহযোগিতা করার চেষ্টা করে।
  • সমাজ এবং রাষ্ট্রের আইন এবং নীতিমালা মেনে চলার চেষ্টা করে।
  • একজন দায়িত্ববান ব্যাক্তির মধ্যে নেতৃত্ব দানের গুনাবলি থাকে।
 
আশা করি উপরোক্ত তথ্য থেকে সামাজিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধের তালিকা এবং মুল্যবোধ সম্পর্কে আপনি সঠিক ধারনা পেয়েছেন।

নিজের আত্মপরিচয়ের প্রতি করণীয় আচরণ

পূর্বে আমরা সামাজিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধের তালিকা এবং দায়িত্বশীলতা কাকে বলে তা সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা জানবো নিজের আত্নপরিচয়ের ক্ষেত্রে আমাদের কি কি করণীয় বিষয় রয়েছে তা সম্পর্কে।
 
একজন মানুষ তার নিজের সত্ত্বা, মুল্যবোধ, বিশ্বাস এবং ব্যক্তিত্বকে সঠিকভাবে সম্মান এবং লালন করাকে বোঝায়। নিম্নে নিজের আত্নপরিচয়ের ক্ষেত্রে করণীয় কিছু বিষয় সম্পর্কে উল্লেখ করা হলো।
 
  • প্রথমত একজন ব্যক্তির নিজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। নিজের চিন্তা, মতামত এবং সিদ্ধান্তগুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে।
  • সবসময় নেতিবাচক সমালোচনা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে।
  • আমি নিজে যে কাজ করি সেই কাজের প্রতি বা নিজের প্রতি আত্নবিশ্বাস গড়ে তুলতে হবে।
  • একজন মানুষের নিজের আত্নপরিচয়ের ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো ব্যাক্তিগত লক্ষ্য নির্ধারণ করা।
  • সবসময় নৈতিক মুল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া।
  • সমাজের খারাপ প্রভাব থেকে নিজের মুল্যবোধকে রক্ষা করা।
  • নিজের সীমাবদ্ধতা এবং দুর্বলতাকে মেনে নেওয়া এবং সেগুলো ঠিক করার পদক্ষেপ নেওয়া।
  • নতুন নতুন দক্ষতা অর্জনের জন্য কাজ করা।
  • নিজের দিকে লক্ষ্য রাখা এবং মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার দিকে নজর রাখা।
  • যেকোনো কাজ করার আগে দীর্ঘমেয়াদী এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহন করা।
  • নিজের আবেগ এবং আচরনকে নিয়ত্রন করার চেষ্টা করা।
  • সবসময় সমাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া।

গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বলতে কি বুঝায়

পূর্বে আমরা সামাজিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধের তালিকা, দায়িত্বশীলতা এবং নিজের আত্নপরিচয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা জানবো গনতান্ত্রিক মুল্যবোধ কাকে বলে তা সম্পর্কে। 

যে আদর্শ বা মুল্যবোধ গনতান্ত্রিক সমাজ ও শাসনব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়ে, তাকে গনতান্ত্রিক মুল্যবোধ বলে। নিম্নে গনতান্তিক মুল্যবোধের প্রধান দিকগুলো উল্লেখ করা হলো।
 
  • গনতান্ত্রিক মুল্যবোধের প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো সমাজে বা রাষ্ট্রে বসবাস করা প্রতিটি মানুষের ব্যাক্তি স্বাধীনতা এবং সেই স্বাধীনতা রক্ষা করার অধিকার।
  • সমাজে এবং রাষ্ট্রে বসবাস করা প্রতিটি নাগরিকের আইনের চোখে সমান অধিকার লাভের অধিকার।
  • প্রতিটি নাগরিকের ন্যায়বিচার লাভের অধিকার গনতান্ত্রিক মুল্যবোধের অংশ।
  • সমাজ বা রাষ্ট্রের যেকোনো কাজে মত প্রকাশের অধিকার গনতান্ত্রিক মুল্যবোধের অংশ।
  • নির্বাচনে অংশগ্রহন করার অধিকার গনতান্ত্রিক মুল্যবোধের অংশ।
  • সমাজ বা রাষ্ট্রে বসবাসকারী প্রতিটি নাগরিকের কাছে সরকারের জবাবদিহিতার অধিকার।
  • মত পার্থক্যের প্রতি সহনশীলতা প্রদর্শন করাও এক ধরনের গনতান্ত্রিক মুল্যবোধ
  • সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং যেকোনো কাজে অংশগ্রহন করাও গনতান্ত্রিক অধিকারের অন্তর্ভুক্ত।

১০ টি সামাজিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধ

দপূর্বে আমরা সামাজিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধের তালিকা, দায়িত্বশীলতা, নিজের আত্মপরিচয়, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে জেনেছি। এখন চলুন জেনে নেই ১০ টি সামাজিক রীতিনীতি এবং মুল্যবোধ সম্পর্কে জানবো।
 
নিম্নে সামাজিক রীতিনীতি সম্পর্কে ১০ টি তথ্য উল্লেখ করা হলো। 

  1. অতিথিদের সবসময় সাদরে গ্রহন করা এবং তাদের আপ্যায়ন করা।
  2. সমাজে বসবাসকারীদের সবসময় শ্রদ্ধা এবং সম্মান করা।
  3. নিজের পরিবার এবং পরিবারের সদস্যদের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়া।
  4. সামাজিক আচরন এবং শিষ্টাচার মেনে চলা।
  5. সমাজে বসবাসকারী একে অপরের প্রতি সহানুভুতি এবং সহমর্মিতা প্রদর্শন করা।
  6. সমাজে বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব পালন করা।
  7. সমাজের সবার সাথে নম্রতা এবং ভদ্রতা বজায় রাখা।
  8. সবার বাক স্বাধীনতাকে সম্মান করা।
  9. প্রতিবেশীদের বিপদে আপদে সাহায্য করা।
  10. সমাজের সবার সাথে সম্প্রীতি ও সহযোগিতা রক্ষা করা। 

নিম্নে সামাজিক মুল্যবোধ সম্পর্কে ১০ টি তথ্য উল্লেখ করা হলো।
 
  1. সবসময় সত্য কথা বলা।
  2. সমাজের সবার প্রতি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা।
  3. সমাজের সবার প্রতি সমান অধিকার রক্ষা করা।
  4. একে অপরকে হিংসা করা থেকে দূরে থাকা।
  5. নিজের কাজ এবং আচরনের প্রতি দায়িত্বশীল হয়ে ওঠা।
  6. সমাজের সব মানুষের শ্রমের মুল দেওয়া।
  7. একে অপরের প্রতি উপকার করা মানসিকতা তৈরি করা।
  8. সবসময় ধৈর্য ধরে কাজ করা।
  9. সবসময় সমাজের জন্য ভালো কাজ করা।
  10. অহংকার না করে বিনয়ী হওয়ার চেষ্টা করা।

লেখকের মন্তব্য - সামাজিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধের তালিকা

আজকের আর্টিকেল থেকে আমরা সামাজিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধের তালিকা, দায়িত্বশীলতা, নিজের আত্মপরিচয়, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে জেনেছি। 

আশা করি আজকের আর্টিকেল থেকে আপনি আপনার মূল্যবান তথ্য পেয়েছেন। প্রতিনিয়ত এই ধরনের আর্টিকেল পড়তে ওয়েবসাইট ফলোও করুন। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url